চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিগত এডহক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় নিয়মানুসারে নতুন এডহক কমিটি প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি পরিবর্তন করে নতুন কমিটি জ্যেষ্ঠতা লঙ্গন করে অনুমোদন হয়। এই নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা এবং অনুমোদিত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সমবায়ীরা এবং তারা এই কমিটি বাতিল করার দাবী জানান। তবে সমবায়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধনক জানিয়েছেন অনুমোদিত কমিটিতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সংশোধন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত ১৪ আগস্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মো. মশিউর রহমান ভূঁইয়া উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করে সর্বসম্মতিতে এডহক কমিটি গঠন করে জেলা সমবায় কার্যালয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সমবায়ের যুগ্ম নিবন্ধক বরার প্রেরণ করেন। কিন্তু ওই প্রস্তাবিত কমিটির চিঠি জেলা সমবায় অফিসে দুই সপ্তাহ থাকার পর প্রস্তাবিত কমিটি পরিবর্তন করে সমবায়ের দশম গ্রেডের অফিসারকে সভাপতি এবং তৃতীয় শ্রেণির দুইজনকে সদস্য করে এডহক কমিটি অনুমোদন করিয়ে নেয়। যার ফলে বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। কারণ নিয়মানুসের উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। সেখানে প্রস্তবিত কমিটির সভাতি হলেন দশম গ্রেডের। এছাড়াও প্রস্তাবিত কমিটি কী কারণে জেলা সমবায় অফিসে আটকে ছিলো এই বিষয়টিও রহস্যজনক।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার কর্তৃক প্রেরিত কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (বিসিএস), উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা আইসিটি অফিসার।
এই বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বলেন, নিয়মানুসারে সর্বসম্মতিক্রমে এডহক কমিটি প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু কিভাবে এই কমিটি পরিবর্তন হয়েছে তা বলতে পারবো না। এই বিষয়ে আমার সাথে কেউ কথা বলেনি।
চাঁদপুর জেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, বিধি অনুসারে কোন উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির মেয়াদ শেষ হলে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সমবায় অফিসার এবং অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে এডহক কমিটি প্রস্তাব করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। বিষয়টি আমি অবগত। জেলা সমবায় অফিসে এসে এই কমিটি পরিবর্তন হয়েছে। প্রস্তাবিত এডহক কমিটির মাধ্যমেই নির্বাচিত কমিটি হওয়ার কথা ছিলো। কারণ সমবায়ীদের সঠিক সময়ে সেবা দিতে হবে। সেখানে যদি শাহরাস্তি উপজেলার সমবায় অফিসারকে সভাপতি করা হয়, সেটা কোন নিয়মে এবং সবমায়ীরা কিভাবে সেবা নিবেন।
তিনি আরো বলেন, আমি এই বিষয়ে সমবায়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধকের সাথে কথা বলেছি এবং চিঠি দিয়েছি। উনি আমাকে জানিছেন বিষয়টি উনি দেখবেন। আর যিনি সভাপতি হবেন তিনি নিজ উদ্যোগে উপজেলায় গিয়ে মিটিং করার জন্য যাওয়ার কথা নয়, কিন্তু যাকে পরিবর্তন করা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে তিনি তাই করেছেন। এছাড়াও পরিবর্তন করা কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্গন হয়েছে।
এদিকে উপজেলা সমবায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, পরিবর্তন করা কমিটির সভাপতি অর্থাৎ শাহরাস্তি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ফরিদগঞ্জ উপজেলায় রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ফরিদগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সাবেক সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম পাটওয়ারী, মামুনুর রহমান পাটওয়ারী, সাবেক পরিচালক তসলিম মিয়া, বিল্লাল হোসেন তালুকদার, হানিফ কাজী, ইয়াছিন মিয়া, সমবায়ী মিজান কাজী, শহিদুল্লাহ খান, খালেক মিজি, ময়নাল মিয়া, তাজুল ইসলাম, মাওলানা হানিফ।
উল্লেখিত সমবায়ীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মোতালবে হোসেনের এহেন কার্যকলাপে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন তারা এই কমিটি মানেনা। তারা প্রস্তাবিত কমিটি ঠিক রেখে অনুমোদন দেয়ার দাবী জানান।
চাঁদপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিল্লাল হোসেন বলেন, সভাপতি মোতালেব হোসেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফরিদগঞ্জে গিয়েছেন বিষয়টি আমরা জানা নেই। উনাকে জানানো হয় উপজেলা থেকে প্রস্তাবিত কমিটি পরিবর্তন হওয়ার বিষয়ে যুগ্ম নিবন্ধককে জানানো হয়েছে। এসব বিষয়ে তিনি তার কার্যালয়ে কথা বলার জন্য আহবান করেন।
সমবায় অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক দুলাল মিয়া বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে যে প্রস্তাবিত কমিটি এসেছে তা আমি পেয়েছি। সেখানে সমবায়ের কোন কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি। সমবায় কর্মকর্তা ও অনুমোদিত কমিটির সভাপতি মোতালেব হোসেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ার বিষয়টি এই কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, প্রস্তাবিত কমিটিতে সমবায়ের কোন কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি। তারপরেও এই কমিটি নিয়ে যেহেতু কথা হচ্ছে, সেহেতু বিষয়টি আমি দেখবো।