চাঁদপুর জেলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুকুর, নদী ও জলাশয়ের পানিতে ডুবে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নৌ ফায়ার স্টেশন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট মাস দুই দিনে জেলায় শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী ১৪৮ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় পানিতে ডুবে ৩৪ জন। এ ছাড়া হাজীগঞ্জে ২৫, কচুয়ায় ১৮, শাহরাস্তিতে ৮, মতলব দক্ষিণে ৭, মতলব উত্তরে ৯, ফরিদগঞ্জে ৩৩ ও হাইমচর উপজেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়।
পানিতে ডুবে এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানা গেছে—শিশুদের বাবা-মা কাজে ব্যস্ত থাকায় বাড়ির পুকুরে ডুবে যাওয়া, সাঁতার না জানায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া, নদীতে গোসল করতে নেমে অসাবধানতা এবং স্রোতে ভেসে যাওয়া।
সম্প্রতি সময়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—গত ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কাদলা ইউনিয়নের শাসনখোলা গ্রামে ড্রেজিং করা খাদের পানিতে ডুবে দিহান (৪) ও শাহীন মিয়ার ছেলে রায়হান (৪) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। দুই শিশু সম্পর্কে মামাতো ও ফুফাতো ভাই।
গত ১ সেপ্টেম্বর মতলব উত্তর উপজেলার ধনাগোদা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ মো. আব্দুল মান্নান (৭০) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে চাঁদপুর নদী ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দল। তিনি স্রোতের কারণে পানিতে তলিয়ে যান।
গত ১৩ আগস্ট সকালে জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ঘিলাতলী এলাকার প্রধানীয়া বাড়িতে পুকুরের পানিতে ডুবে তাকরিম হাসান নামে আড়াই বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়। তার বাবার নাম আবদুল বারেক প্রধান।
হাইমচরে গত ২৩ মে চরভৈরবী ইউনিয়নের বগুলা গ্রামের হারুনুর রশিদ হাওলাদারের ছেলে ইব্রাহিম (৪) ও মেয়ে ফয়জিয়া (২) পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়।
গত ১৭ মে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের ষোলদানা ও রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়—ষোলদানা গ্রামের রুবেলের ছেলে মো. আবদুল্লাহ (২) এবং সাহেবগঞ্জ গ্রামের কাতার প্রবাসী মাহবুবের ছেলে মাহফুজ (২)।
চাঁদপুর সদরে গত ৯ এপ্রিল সকালে চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামে বেড়াতে এসে পুকুরের পানিতে গোসল করতে নেমে ডুবে মা খাদিজা আক্তার (৩০) ও ছেলে আবু বকর (৭) মারা যান। একই দিন বালিয়া ইউনিয়নের সাবদি গ্রামের ফজলুর রহমানের দুই বছরের মেয়েশিশু মনসুরা পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়।
কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া গ্রামে গত ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে অটোরিকশাচালক আলমের ছেলে মেহেদী হাসান (৫) ও মাসুদ বাবুর্চির ছেলে জাবেদ (৫) পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়।
গত ১ মার্চ দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের রামদাসদীর মাইমুনা (৩), সকদী এলাকার মিরাজ (দেড় বছর) ও হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও এলাকার জুনায়েদ হোসেন (২) পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জেলা সদর হাসপাতাল, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৭ উপজেলার রেজিস্ট্রারে রেকর্ডকৃত তথ্যানুযায়ী পানিতে ডুবে এসব মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অনেক সময় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর পরে হাসপাতালে আনা হয় না। যার ফলে পরিসংখ্যান কমবেশি হতে পারে।