কুমিল্লায় ‘তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর মুক্ত আলোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তাওহীদের পক্ষ থেকে জেলার জমজম টাওয়ারের গোল্ডেন স্পুন হোটেলে এই আয়োজন করা হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন হেযবুত তাওহীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক রাকিব আল হাসান। তিনি সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের রচিত ‘তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ গ্রন্থের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরেন। সেইসাথে বর্তমানে রাষ্ট্রের অস্থির পরিস্থিতি ও প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরে তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজ আরবের আইয়ামে জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। মব কালচারের কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। কবর থেকে মৃত মানুষের লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে—যা জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুদভিত্তিক অর্থনীতি চলমান রয়েছে। এই ব্যবস্থায় গুটিকয়েক মানুষ সুবিধা ভোগ করে। পুঁজিপতিরা আরও ধনবান হয়, আর সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হয়। বিচারব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত মামলার জট বাড়ছে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষ্য ও ত্রুটিযুক্ত বিচার ব্যবস্থার কারণে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তি বছরের পর বছর কারাগারে থাকার পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জীবনের মূল্যবান সময় হারাচ্ছেন।
শিক্ষা ব্যবস্থার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেটা অশিক্ষিত নয় বরং শিক্ষিত মানুষের মাধ্যমেই হচ্ছে। ব্রিটিশদের বিভাজন নীতি ও কেরানি শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে আজ এই অবস্থা। ব্রিটিশ প্রভুরা মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। আর সাধারণ কেরানি শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মানুষ নীতি-আদর্শহীন, স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। যে কারণে তারা নিজেদের স্বার্থে দেশের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
এভাবে তিনি প্রচলিত রাষ্ট্রনীতি, বিচারব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে ত্রুটি তুলে ধরে তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়ে আলোকপাত করেন। দেশে চলমান মব কালচার, নিরাপত্তাহীনতা, অন্যায় ও দুর্নীতি বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে হেযবুত তাওহীদের প্রস্তাবনার বিস্তারিত জানতে ‘তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ বইটি পড়ার অনুরোধ রাখেন।
কুমিল্লা জেলা হেযবুত তাওহীদের সভাপতি মো. ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজবদ্ধভাবে থাকতে হলে একটি ত্রুটিমুক্ত নিখুঁত জীবনব্যবস্থা প্রয়োজন—যেটা মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়।
কেন সম্ভব নয় সে বিষয়ে উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, মিষ্টির বিষয়ে যদি কাউকে আইন রচনা করতে বলা হয়, তাহলে যিনি মিষ্টি পছন্দ করেন তিনি মিষ্টির উপকারিতা তুলে ধরবেন। অন্যদিকে মিষ্টির বিষয়ে যদি কোনো ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি লেখেন, তাহলে তিনি মিষ্টির ক্ষতিকর দিক তুলে ধরবেন। এভাবেই জীবনব্যবস্থা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও মানুষ তার স্বভাবজাত চরিত্রের কারণে নিজের সুবিধা বিবেচনা করবে। যে কারণে আল্লাহর দেওয়া ত্রুটিমুক্ত জীবনব্যবস্থা ছাড়া মানুষের তৈরি বিধান দিয়ে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সংবিধানে ১৭ বার পরিবর্তন আনা হলেও তা জাতিকে কাঙ্ক্ষিত শান্তি দিতে পারেনি, কারণ মানুষের তৈরি এই ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ ও দুর্বল। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আল্লাহর হুকুমের ভিত্তিতে একটি তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলে যে শান্তি আসবে তার বাস্তব প্রমাণ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সেই শাসনামল। যেই আদর্শের কারণে জাহেলিয়াতের নিমজ্জিত সেই সমাজের বর্বর মানুষগুলো সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিল।
‘তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ গ্রন্থের আলোকে রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরার শেষে গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, ইসলামী চিন্তাবিদ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও প্রথিতযশা সাংবাদিকেরা সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তাওহীদ কুমিল্লা অঞ্চলের আমির মো. সাইফুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নারী নেত্রী জোবেদা আক্তার বেবী, কুমিল্লা অঞ্চলের নারী নেত্রী আসমা আক্তার, কুমিল্লা জেলা নারী নেত্রী সেলিনা আক্তার ইতি প্রমুখ।