চাদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর আন্তজেলা সীমানা ঘেঁষে ইজারাগ্রহীতা পক্ষ কর্তৃক আবারো ড্রেজার দিয়ে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে আশপাশের এলাকাসহ মেঘনা-ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ সেচ প্রকল্পের ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। গত কয়েকমাস প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনকালে মুন্সিগন্জ সদর উপজেলার স্হানীয় জনসাধারণের বাধার মুখে একাধিক বার বালু উত্তোলন বন্ধ হয়। সূত্রমতে, এ সময়ে আন্তজেলা জলসীমা অতিক্রম করায় মোহনপুর নৌ পুলিশ কর্ত্ক প্রায় অর্ধশত ড্রেজার ও বাল্কহেডের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজূ করেছে। সূত্র আরো জানায়, মুন্সিগন্জ জেলা প্রশাসন ও ইজারাগ্রহীতা পক্ষ মেঘনা নদীর মধ্যবর্তী অংশ পর্যন্ত সীমানা দাবী করে, যাতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের মতানৈক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তঃজেলা জলসীমানা নিয়ে উদ্ভুত জটিলতা ও এলাকাবাসীর স্বার্থ সুরক্ষায় উচ্চতর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ সময়ের দাবী।
গত কয়েকদিন মুন্সিগন্জ উপজেলার কালিরচর এলাকায় প্রকাশ্যে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলতে দেখা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজার গ্রহীতা পক্ষের লোকজন কয়েকদিন ধরে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে, নিয়ম কানুন মানছে না।
স্থানীয় দশানি গ্রামের মাজেদুর রহমান বলেন, দিনের বেলায় মেশিন বসিয়ে বালু তোলে। নদীর পাড় ধসে যেকোন সময় আমাদের ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বেড়িবাঁধ যদি ভেঙে যায়, তাহলে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। অথচ প্রশাসনের উপর মহল দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনকে বারবার জানালেও কোনো ফল পাইনি। মনে হয় বালু সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসন জিম্মি।
‘মাটি ও মানুষ’ নামে মতলবের পরিবেশবাদী সংগঠনের পরিচালক শামীম খান বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন অবৈধভাবে ড্রেজার চলছে। এটি কেবল নদীভাঙন বাড়াচ্ছে না। বরং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী বলেন, মুন্সিগঞ্জ এলাকায় মুন্সিগন্জ জেলা প্রশাসন কর্তৃক মূলত বালু উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। সেখানে তারা বালু উত্তোলন করে। নৌ পুলিশ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করছে, সার্বক্ষনিক তৎপর রয়েছে এবং এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, মতলব উত্তরের জল সীমানায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে নৌ পুলিশ ও আমরা নিয়মিত নদীতে অভিযান করছি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এই বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা অচিরেই যৌথ বাহিনীর একটি অভিযান পরিচালনা করব।
ডিসি আরো বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কেউ পার পাবে না। এতে ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে লাখো মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তারিখ: ১৯.০৮.২০২৫খ্রি.