চাঁদপুর জেলার আট উপজেলায় প্রায় তিন মাস ধরে হাঁস-মুরগীর ভ্যাকসিনের সংকট চলছে। এতে করে খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শুধুমাত্র গত ১৫ এপ্রিল হাজীগঞ্জ উপজেলায় এক খামারির ১৯টি হাঁস মারা গেছে। অভিযোগ রয়েছে—উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে বারবার গিয়েও তিনি ভ্যাকসিন পাননি।
এই সংকটের বাস্তবতা জানার জন্য বুধবার দুপুরে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ছুটে যান দৈনিক খোলা কাগজ-এর প্রতিনিধি রিয়াজ শাওন এবং দৈনিক আদি বাংলা-এর প্রতিনিধি নূর মোহাম্মদ। কিন্তু সেখানে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তারা।
অফিস চলাকালীন সময় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমেনা আক্তার বিভিন্ন কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। যদিও অফিসে সাঁটানো একটি নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, “সপ্তাহে রবিবার ও মঙ্গলবার বেলা ২টার পর কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং হবে”। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর মিটিং সংক্ষিপ্ত করে তাদের অফিসে প্রবেশের অনুমতি দেন তিনি।
তবে হাঁস-মুরগীর মৃত্যুর ঘটনা ও ভ্যাকসিন সংকট নিয়ে প্রশ্ন করতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন ওই কর্মকর্তা। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি অফিস স্টাফদের ডেকে এনে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেন, তাদের ভিডিও ধারণ করেন এবং হুমকি-ধমকি দেন।
রিয়াজ শাওন বলেন, “আমরা জানতে চেয়েছিলাম, কোন ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে, কবে নাগাদ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু তথ্য চাইতেই তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন।”
নূর মোহাম্মদ বলেন, “আমরা শুধু তথ্য নিতে গিয়েছিলাম। অথচ তিনি আমাদের ভিডিও ধারণ করতে বলেন এবং অফিসের কয়েকজন কর্মচারী আমাদের ঘিরে ধরেন। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়।”
তিনি আরও জানান, ওই কর্মকর্তা জানতে চান, “ভুক্তভোগী খামারির নম্বর তারা কীভাবে পেলো, এবং সাংবাদিকদেরকে চেনে কীভাবে?” এরপর তিনি চিৎকার করে অফিসের অন্যান্য কর্মীদের দিয়ে সাংবাদিকদের ভিডিও ধারণ করান।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, “ঘটনাটি আমি জেনেছি। কোনো শব্দচয়ন অশালীন হয়ে থাকলে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।” ভিডিও ধারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে কোনো অপপ্রচার যেন না হয়, এজন্য অফিস স্টাফদের দিয়ে ভিডিও ধারণ করতে বলা হয়েছে।”
ভ্যাকসিন সংকট বিষয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে চাঁদপুর জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে হাঁস-মুরগীর ভ্যাকসিন রয়েছে। তবে আগের কয়েক মাস কিছুটা সংকট ছিল।”
এই বিষয়টায় বিকালে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে আল জাহেদ হোসেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ও হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ কাছে দুঃখ প্রকাশ করে।