চাঁদপুরের মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। এমন সুপারিশেই তৎকালীন সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশে নিয়োগ পান। কিন্তু চিত্র পাল্টে যায় শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। তিনি এখন সাচ্চা বিএনপি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাবেক সদস্য বলে দাবী করছেন।

খোঁজ নিয়ে ও তার নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র থেকে জানাগেছে, ২০১৮ সালে সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কলেজ জাতীয়করণ হয়। একই সময় জাতীয়করণ হয় মতলব ডিগ্রি কলেজ। এই সুযোগে আবুল কালাম আজাদ নিজ এলাকায় আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তদ্বির শুরু হয়। তার এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির একান্ত অনুগত চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারসহ আবুল কালাম আজাদের ভাই কাজল তদ্বিরে সহযোগিতা করেন। তবে নিজ ভাই তার নিয়োগে তদ্বির প্রক্রিয়া চালিয়েছেন এই তথ্য অধ্যক্ষ আজাদ নিজেই স্বীকার করেন।

এদিকে আবুল কালাম আজাদকে নিয়োগ সুপারিশ করেন ওই সময়কার চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুল আমিন রুহুল। তিনি ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর তারিখে ডিও লেটারে শিক্ষামন্ত্রী বরবার উল্লেখ করেন, ‘আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বিশ্বস্থ সৈনিক। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক ও যুগপোযোগী শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন, সরকারের আদর্শ ও উদ্দেশ্য ও গৃহীত নানামূখী উন্নয়ন কর্মকান্ড তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা, সর্বোপরি ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য উনাকে মতলব কলেজের প্রিন্সিপাল হিসাবে পদায়ন করা প্রয়োজন।’

এছাড়াও আবুুল কালাম আজাদকে আওয়ামী লীগের একান্ত ও বঙ্গবন্ধুর আদের্শর সৈনিক হিসেবে প্রমাণ তুলে ধরার জন্য সুপারিশ করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির একান্ত অনুগত রতন কুমার মজুমদার। তিনি মন্ত্রীর বড় ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু বরাবার ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘মতলব কলেজ জাতীয়করণ  হয়েছে। নতুন প্রিন্সিপাল দরকার। আগে ভুলক্রমে মাছুম বিল্লাহ নামে ইসলাম শিক্ষার জামায়াতপন্থী একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। পরে সে অর্ডার বাতিল হয়। আবুল কালাম আজাদ নামে মতলবের একজন শিক্ষক এখানে আসার জন্য দরখাস্ত করেছেন।’

রতন কুমার চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, ‘প্রার্থীর সাথে কথা বলেছি। যাচাই-বাছাই করেছি। তিনি আমাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী। উনার নিয়োগের ব্যাপারে আপার (শিক্ষামন্ত্রী) সাথে কথা বলেছি। মাউসির ডিজি অবগত আছেন। মতলবের স্থানীয় সংসদ সদস্যও ডিও লেটার দিয়েছেন। মতলবের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও অনুরোধ করেছেন। বিএনপি জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস, জ¦ালাও পোড়াও, দেশ বিরোধী চক্রান্ত, অনর্গল মিথ্যাচারসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি শক্ত অবস্থানে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।’

নিয়োগের পূর্বে আবুল কালাম আজাদ (পরিচিতি নং-০০০০৩৩৫৭) সহযোগী অধ্যাপক (প্রাণিবিদ্যা) বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে এই কলেজে ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর সহযোগী অধ্যাপক (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি ২০২০ সালের ৩০ জুলাই অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২০ মার্চ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে একই কলেজে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবুল কালাম আজাদ ভোলপাল্টে বনেযান সাচ্চা বিএনপি। কিন্তু এর আগে তিনি ২০২৪ সালের ৫ জুন কলেজে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়েও কিভাবে এখন পর্যন্ত এই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যেভাবে হউক আমি এখন পর্যন্ত টিকে আছি। আমাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে ওই ধরণের কাগজপত্র আমি দেখিনি। তবে ডিও লেটার জমা দিয়েছি।

অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলে ছিলাম সেখানে সকলেই ছিলো ছাত্রদলের। তবে আমি সক্রিয় ছিলাম না, কারণ আমি পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলাম। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক এই কথা উচ্চারণ করতে না পেরে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি এবং গা জ¦লে উঠত।’