চাঁদপুর সদর উপজেলা বিআরডিবির দপ্তর বদল করে ২১ বছর চাকরি করেন মো. আবুল কাশেম। এই সুযোগে তিনি নানা ভাবে সম্পদের মালিক হন। ওইসব টাকায় নির্মাণ করেন বিলাসবহুল বাড়ি। তবে তিনি বাড়ি তৈরীতে নানাভাবে অর্থের যোগান দিয়েছেন বলে দাবী করেন।
অনুসন্ধান করে জানাগেছে, সদর উপজেলা বিআরডিবি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও হিসাব রক্ষক মো. আবুল কাশেম খান ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ সাল থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৭ সাল পর্যন্ত হিসাব রক্ষক পদে চাঁদপুর সদর উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। একই কর্মস্থলে ২১ বছরের অধিক সময় তিনি হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন। ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ এবং ১৩ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ২০ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত চাঁদপুর সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে এই সময়কালে মাঠ সংগঠক ইকবাল বাহারের সাথে আতাত করে কাশেম খান ৪৩ লক্ষ অর্থ লোপাটে বিভিন্নভাবে সহযোগী ভূমিকায় কাজ করেন। বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তাদের বক্তব্য এমন তথ্য পাওয়া যায়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি কর্মরত থেকে ইতিমধ্যে অবসরত্তোর ছুটিতে আছেন। তার সময়কালে এ উপজেলায় পরস্পরের যোগসাজশে ৪২ লাখ ৮২ হাজার ১শ’ ৭৮ টাকা আত্মসাতের মতো ঘটনা ঘটে। ঐ দুর্নীতির টাকায় তিনি নিজেও আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে গড়ে তুলেছেন নিজ এলাকায় আলিশান বাড়িসহ সম্পত্তি।
স্থানীয় সমবায়ীসহ সরকারি কোষাগারের টাকা দিনের পর দিন লোপাট করে বিষয়টিকে কোন প্রকার সুরহা না করেই আবুল কাশেম খান এখন স্থায়ীভাবে অবসরে যাচ্ছেন। ঠিক তখনি প্রশ্ন উঠছে তাহলে তার মাধ্যমে লোপাট হওয়া সরকারি টাকার কী হবে।
এদিকে ৪৩ লাখ টাকা লোপাট কান্ডে গত ২৩ অক্টোবর ৩ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি তাদের সরোজমিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, চাঁদপুর সদর উপজেলাতে অধিকাংশ সময়ই নিয়মিতভাবে কোন ইউআরডিও, এআরডিও এবং হিসাবরক্ষক কর্মরত ছিল না। বিভিন্ন সময়ে যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নির্মিত অথবা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ছিল প্রচন্ড রকমের প্রশাসনিক দুর্বলতা। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা নিয়মিত সমিতি পরিদর্শন না করায় ইকবাল বাহার মাঠ সংগঠক (মউ) এর সাথে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত মোঃ আবুল কাশেম খান এবং হিসাব রক্ষক মোঃ আব্দুল গনির আর্থিক লেনদেন পরিচালনা, মউ এর আংশিক প্রতিবেদনে ঋণ আদায়ের তথ্য ও খেলাফি ঋণ গোপন করার সুবাধে একমাত্র মাঠ সংগঠক ইকবাল বাহার জড়িত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মর্মে প্রতিয়মান উল্লেখ করেন তদন্ত প্রতিবেদনে।
মো. আবুল কাশেম খান (ই-২৯৯১) প্রাক্তন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও মো. আবদুল গণি (ই-৪১৭০) হিসাব রক্ষক কর্তৃক মৌখিকভাবে স্বীকার ও অন্যান্য কর্মচারীদের লিখিত বক্তব্য থেকে প্রতিয়মান হয়; মাঠ সংগঠক ইকবাল বাহারের নিকট হতে মাঝে মধ্যে টাকা ধার নেয়া ও পরিশোধের ঘটনাটি সত্য। এমন লেনদেনের ফলে আবুল কাশেম খান ও আবদুল গণি কর্তৃক ইকবাল বাহারের টাকা আত্মসাতের ঘটনাকে আরো বেশি প্ররোচিত করে মর্মে প্রতিয়মান হয়।
তদন্ত কমিটির তথ্য যদি সত্যি হয়; তাহলে মো. আবুল কাশেম খান দীর্ঘ দিন ধরে নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় নিজের আখের গুছিয়ে নেন সমানতালে। সাথে মাঠ কর্মীদের বিভিন্নভাবে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে নিজেই আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অফিসের অপরাপর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি করেন। যার কারণে সমবায়ীদের বিভিন্ন খাতের টাকা একে অপরের সমন্বয়ে লোপাট হলেও নিরব থাকেন এই কাশেম খান।
অতি চালাক কাশেম নিজকে আড়াল করতে কৌশল হিসেবে ঋণের নামে নির্ধারিত কমিশনের ভিত্তিতে নিজের ভাগ ষোলআনা বুঝে পেয়েই তদন্ত কমিটির কাছে নিজকে ম্যানেজ করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে পুরো দায় চাপিয়ে দেন মাঠ সংগঠকের উপর। কিন্তু কাসেম এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এখন অবসরত্তোর সুবিধা ভোগ করছেন বলে জানায় চাঁদপুর বিআরডিবি অফিস।
চাঁদপুরের স্থানীয় সমবায়ীরা দাবী করছেন দুর্নীতিবাজ এই আবুল কাশেস চূড়ান্তভাবে অবসরে গেলে তার সময়ে ৪২ লাখ ৮২ হাজার ১শ’ ৭৮ টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি চাপা পড়ে যাবে। একই সাথে ফেঁসে যাবেন নিরহ কর্মচারী ইকবাল বাহার গং। তাই সমবায়ীরা দাবী করছেন আবুল কাশেম খান পুর্নাঙ্গ অবসরে যাওয়ার আগেই দুর্নীতির টাকা বিআরডিবির নিজস্ব হিসাব নম্বরে জমাদানের ব্যবস্থা করার। তাহলে আবুল কাশেম খানের মাধ্যমে যে টাকা লোপাট হয়েছে তা তামাদি হয়ে যাবে।
জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের হামনকর্দি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা আবুল কাশেম খান। তার বাড়ির আশপাশের স্থানীয় লোকজন জানান, কাশেম দুর্নীতির টাকায় সম্প্রতি আলিশন বাড়ি নির্মাণ করছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যাবহার করে তিনি শুধুমাত্র সম্পদশালী হয়ে উঠেননি বরং বনে যান টাকার কুমির।
অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে আবুল কাশেম খান তার বক্তব্য জানান, এমন দুর্নীতির সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি তার সময়ে হয়ে যাওয়া আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন তিনি নিজেই।