চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নের মালিগাঁও গ্রামে মৃত ছফি উল্লাহর ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে। মৃত ছফি উল্লাহর মেয়েরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের বাবার সম্পত্তি থেকে তারা আইনানুগ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। হেবা দলিলের মাধ্যমে জালিয়াতি করে বাবার সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে তিন ভাই। এই হেবা দলিল বাতিল চেয়ে চাঁদপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছে বঞ্চিত তিন বোন।
জানা যায়, মৃত ছফি উল্লাহর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫ একর ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশের মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, ছেলেরা দ্বিগুণ এবং মেয়েরা এক ভাগ করে সম্পত্তি পাওয়ার কথা। হিসাব অনুযায়ী: প্রতি ছেলে পাবে: ১০২.৯ শতাংশ, প্রতি মেয়ে পাবে: ৫১.৪৫ শতাংশ।
তবে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ, ছফি উল্লাহ জীবদ্দশায় একটি কথিত হেবা দলিল তৈরি করেন (দলিল নং ২১৮৪), যেখানে সম্পত্তি বণ্টনের পরিমাণ দেখা যায়: মেয়ে নাছিমা বেগম: ১২ শতাংশ,মেয়ে নাজমা বেগম: ২২ শতাংশ,ছেলে জাকির হোসেন: ১ একর ৭২ শতাংশ
,ছেলে জাহাঙ্গীর: ১ একর ৭৬ শতাংশ,ছেলে আমির: ১ একর ৮৪ শতাংশ। অথচ বাকি তিন মেয়ে শাহনারা বেগম, সেলিনা বেগম, শিউলি বেগমকে কোনো সম্পত্তি দেওয়া হয়নি।
হেবা দলিলের ১ ও ২ নং গ্রহীতা নাছিমা বেগম এবং নাজমা বেগম দাবি করেছেন, এই হেবা দলিল সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তারা কখনো সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যাননি এবং দলিলে তাদের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে।
নাছিমা বেগম বলেন, "আইন অনুযায়ী আমার পাওনা ৫১ শতাংশ। সেখানে মাত্র ১২ শতাংশ জমি আমি হেবা দলিলের মাধ্যমে নেব কেন? আমি এই দলিল সম্পর্কে কিছুই জানি না এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কখনো যাইনি।
নাজমা বেগম বলেন, "বাবা অসুস্থ ছিলেন। তিনি কবে গিয়ে দলিল করলেন, আমরা কিছুই জানি না। আমার নামে ২২ ২২ শতাংশ জমি দেওয়া হয়েছে, অথচ আমার পাওনা প্রায় ৫১ শতাংশ। আমার ভাইরা নিজেদের স্বার্থে আমাদের নামে সামান্য সম্পত্তি দেখিয়ে পুরো জমি দখল করেছে।
দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে গ্রহীতা জাকির হোসেন প্রথমে বলেন, তিনি যাননি। কিছুক্ষণ পর আবার স্বীকার করেন, তিনি গিয়েছিলেন এবং সই দিয়ে চলে এসেছেন।
বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন এবং হেবা আইন অনুযায়ী, হেবা তখনই বৈধ হয় যদি দাতা ও গ্রহীতা হেবার বিষয়ে অবগত থাকে এবং সম্মতি দেয়। এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়, গ্রহীতা নাছিমা ও নাজমা হেবা দলিল সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ফলে এই হেবা দলিলের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
দলিল সৃজন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দলিল লেখক শাহাদাত হোসেন ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, "আমি এই দলিল সম্পর্কে কিছুই জানি না। সব কিছু (দলিল লেখক) কাউসার জানে। আমাকে বলছে স্বাক্ষর দিতে, আমি দিয়েছি।
আরেক দলিল লেখক কাউসার বলেন, "আমি এই দলিল সৃজন করিনি। তবে যেহেতু এই সম্পত্তি আমার এলাকার, আমি কিছু বিষয় জানি।
সম্পত্তি বঞ্চিত মেয়ে শিউলি বেগম জানান, তাদের বাবা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন এবং এই দলিল তার স্বেচ্ছায় তৈরি করার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, "আমরা জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমি এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত সবার বিচার চাই।
এ নিয়ে চাদপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, তারা ফৌজদারি আদালতে কথিত হেবা দলিলের বৈধতা নিয়ে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে পিতার সম্পত্তি নিয়ে মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং পারিবারিক জালিয়াতির চিত্র স্পষ্ট। আদালতের রায়ই নির্ধারণ করবে প্রকৃত সত্য এবং ন্যায়বিচার।