ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন নৌকা সমর্থিত পৌর মেয়রের ছত্রছায়ায় থেকে অঢেল সম্পত্তি গড়েছেন। গত সোমবার (৫ আগস্ট)শেখ হাসিনা সরকারের পদ ত্যাগের পর ওই ক্যাশিয়ার আত্মগোপণে থাকলেও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত পৌরসভা কার্যালয়ে আসেননি তিনি।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার স্থানীয় নাগরিকদের দেয়া তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে তিনি ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় যোগদান করেন। যোগদানের পরই তিনি ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ারের বদলী করান এবং তৎকালীন মেয়রের মাধ্যমে তিনি ক্যাশিয়ার (অঃদাঃ/ভারপ্রাপ্ত) এর দায়িত্ব গ্রহন করেন। অদ্যবদি তিনি উক্ত পদে বহাল আছেন। তিনি নিজেকে সকল ক্ষেত্রে ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়ে তিনি একজন ছায়া মেয়রের মত ফরিদগঞ্জ পৌরসভার জনসাধারন ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আচরণ করেন। ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে থেকে মৃত কর্মচারিরের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা, মাস্টাররোলের কর্মচারিদের ছাটাই, পৌরসভার দুই উদ্যোগতাকে ষড়যন্ত্র করে ছাটাই করে উক্ত সকলের বেতনসহ পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন সর্বসাক্কুল্যে পান ৪০ হাজার টাকা বেতন। স্ত্রী ও ২ ছেলেসহ পরিবারের একাংশ নিয়ে থাকেন ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় ভাড়া বাসায়। ছোট ছেলে ফরিদগঞ্জ এ আর হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। বড় ছেলে ঢাকা আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। সেখানে ভর্তি হতে খরচ হয় ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা, এবং প্রতি সেমিস্টার ফি ১ লক্ষ ২ হাজার টাকা করে খরচ। গড়ে প্রতি মাসে বড় ছেলের পিছনে মাসে ২০-২৫ হাজার খরচ হয়। প্রাপ্যবেতন দিয়ে তিনি কিভাবে এত খরচ চালান প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
গিয়াস উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ৪ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি,বেশ কয়েকটি দোকানসহ একটি মার্কেট গড়েছেন তিনি। এলাকাতে নামে বেনামে ক্রয় করেছেন আরো সম্পত্তি।
অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসন সহ সকল প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় এবং সকল কার্যক্রম অনলাইন পদ্ধতিতে সংরক্ষন করা হলেও ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় তা হয়না। অত্র পৌরসভায় সকল ব্যয়ের চেক বাহক চেকের মাধ্যমে ভাঙ্গানো হয়, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোন চেক একাউন্ট পে হয়না। এসকল কিছুর পিছনে আছে কারসাজি, পৌরসভার ফান্ডে টাকা নেই এমন টালবাহানা করে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেন তিনি। যে কর্মচারী তার কথা না শুনে না তার বিরুদ্ধে মেয়রের কাছে উল্টাপাল্টা নালিশ করে ওই কর্মচারীকে শোকজ, সাময়িক বরখাস্ত এমনকি বেতন বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়।
২০২১ সালে বর্তমান পরিষদ গঠন হওয়ার পর সরকারি নির্দেশ মোতাবেক মাষ্টাররোল কর্মচারী ছাটাই করা হয়। বেশীর ভাগের ১০-২০ মাসের বেতন বকেয়া ছিল, যা অদ্যবদি দেওয়া হয়নি। তাদেরও ৩-৬ মাস পযর্ন্ত বকেয়া ছিল। সেটাকাও দেন না তিনি।
২০২১-২২ইং অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারি অনুদানকৃত ২৮ লক্ষ (আটাশ লক্ষ) টাকা উত্তোলন করে কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিলে জমা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তিনি তা করেন নি। সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে ছোট ছোট ভুয়া বিল ভাউচার (পঁচিশ হাজার টাকার প্রজেক্ট) করে তিনি পৌরসভার অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে জানা যায়। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৫লক্ষ (পঁয়ত্রিশ লক্ষ) টাকা গরমিলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সকল ক্ষেত্রে তার কমিশন বানিজ্য আছে, পৌরসভার বিল আনতে গেলে মানুষ তার কাছে ভিক্ষুকের মত বসে থাকতে হয়। পৌরসভার ব্যাংক একাউন্ট কয়টি জানতে দেন না কাউকে,এমন কি একাউন্টে সকালে টাকা জমা দিলে বিকালে থাকে না, সব সময় একাউন্ট খালি থাকে,বিভিন্ন সময় প্রকল্পের টাকা চেক দিলে, ব্যাংকে গেলে বাহকরা দেখেন একাউন্টে কোন টাকা নেই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক পৌর কর্মচারীরা জানান, পৌর মেয়রের রাজনৈতিক অনেক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেছেন ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন। মেয়রের ছত্রছায়ায় থেকে মাস্টার রোলের কর্মচারীদের হুমধমকি দিয়ে বেআইনীবে চাকুরীচুত করে তাদের পাওনা টাকা আত্মসাত করেছেন ভারপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন।
আবুল কাশেম, লুৎপুর রহমান,ইসমাইল হোসেন,আব্দুল খালেক, আব্দুল মান্নান,হাবিব উল্ল্যা,আফসার উদ্দিন মোল্লা এই কর্মকর্তাদের নামে রাজস্ব তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা করে গোপনে লোন নেন ক্যাশিয়ার এই কর্মকর্তারা লোনের ব্যাপারে জানেন বলেও অভিযোগ উঠেছে,পরবর্তীতে এই কর্মকর্তারা যখন নিজেদের প্রয়োজনে রাজস্ব থেকে লোন চাইলে এইগুলো প্রকাশ পায়।
মাস্টার রুলের চাকরি ছেড়ে দেওয়া রোজিনা আক্তার জানান , গত বছর জুলাই মাসের ২৪ তারিখে চাকরি ছেড়ে দিছি, ৬ মাসের বেতন পাবো ক্যাশিয়ার বেতন দেয়না,দেবো দেবো বলে আর খবর থাকে না।পিংকি নামে আরেক মাস্টার রুলের কর্মচারি ২ মাস ও আছমা আক্তার ৮ মাসের বেতন পাবে,তারা পাচ্ছে না তাদের বেতন। আবু তাহের নামে আরেকজন মাস্টার রুলের কর্মচারি (ড্রাইভার পদে) বলেন আমি ১১ মাসের বেতন পাবো ক্যাশিয়ার বেতন দিচ্ছে না।
ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে পালিয়ে রয়েছেন,তার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।